পাটের জেলা ফরিদপুর, তাইতো সরকারিভাবে এই জেলার স্লোগান ‘সোনালী আঁশে ভরপুর, ভালবাসি ফরিদপুর’। চলতি মৌসুমে জেলার অধিকাংশ কৃষক-কৃষাণীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।
ফরিদপুর জেলা জুড়ে এখন চলছে ‘সোনালী আঁশ খ্যাত’ পাট ঘরে তোলা প্রক্রিয়ার কাজ। কেউ ক্ষেত থেকে কাটছে, কেউ আবার আটি বেধে জাগ দেয়ার জন্য ছুটছে নদ-নদী কিংবা জলাশয়ের ধারে। কেউ আবার পানি থেকে তুলে পাটের আঁশ বাছাই করে ধুয়ে রোদে শুকানোর কাজে সময় পার করছে। আর যারা আগেভাগেই এই প্রক্রিয়া শেষ করেছে তারা বাজারের নিয়ে বিক্রয় করার কাজে ব্যস্ত।
আরও পড়ুনঃ পাটের বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে: পাট মন্ত্রী
ফরিদপুর জেলার নয় উপজেলায় চলছে এমন চিত্র। প্রতি বছর পাট চাষের মৌসুমে জেলার আবাদি জমির অধিকাংশতেই পাটের চাষ করে চাষিরা। এই জেলায় পাট চাষের উপযোগী মাটির স্বাস্থ্য, অনুকূল আবহাওয়ায় কারণে গুণগত ও মানসম্পন্ন পাট উৎপাদন হয়। যা সারা পৃথিবী জুড়ে সমাদৃত। চলতি মৌসুমে জেলার দেড় লক্ষাধিক চাষি তাদের জমিতে পাটের চাষ করেছে।
ফরিদপুর পাট গবেষণা অফিস সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরে দুই জাতের (তোসা জিআরও ৫২৪-ভারতীয় এবং মাস্তে ও-৯৮৯৭ দেশী জাত) পাট আবাদ হয়। এর মধ্যে ভারতীয় জাতের পাটের বীজ ৯০ শতাংশ চাষ হয়ে থাকে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত ২০১০-১১ সালে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে চাষিরা, এর বিপরীতে আট লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উৎপাদন হয়।
আরও পড়ুনঃ দেশের পাটের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ভারত পাকিস্তানে
চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে কৃষি বিভাগ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করেছে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল (১৮০ কেজিতে ১ বেল)। গত দশ মৌসুমে পাটের আবাদ বেড়েছে নয় হাজার ১০৯ হেক্টর জমিতে।
ফরিদপুর পাট গবেষনা ইনস্টিটিউট (পিএসও) ড. রনজিৎ কুমার ঘোষ জানান, ফরিদপুরে আষাঢ়-শ্রাবন মাসে জমি থেকে পাট কর্তন করা হয়। এই মৌসুমে খরা ও বৃষ্টি প্রবণ হওয়ায় এই অঞ্চলে পাটের আবাদ ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, জেলায় দেড় লক্ষাধিক চাষি পাট চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, এছাড়াও প্রতিবছরই নতুন নতুন চাষি যুক্ত হয় পাটের সঙ্গে।
আরও পড়ুনঃ পাটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে: পাটমন্ত্রী
জেলার সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের পাট চাষি হাবিব মোল্লা ও আকমল খান জানান, যদি পাটের দাম প্রতিমণ ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার থাকে তাহলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।
বোয়ালমারীর বিভিন্ন মাঠের পাটচাষী দাবি করেন, বিগত বছরগুলোর অধিকাংশ সময়ই পাটের ন্যায্যমূল্য পায়নি, তবে গত দুই বছর যাবত তুলনামূলকভাবে ভালো দর পাচ্ছেন।
একই উপজেলার ঘোষপুরের পাট চাষি মজিবুর রহমান বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় দুই হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ করেছি। ক্ষেতে পাটের ফলনও বেশ হয়েছে। আশা করছি উৎপাদন ভালো হবে।’
জেলার পাট চাষের অন্যতম নগরকান্দার পাট চাষি আবজাল হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় পাটের আবাদ বেশি করেছি। আশা করছি ভালো দামও পাব। তবে বপনের সময় প্রচণ্ড রোদের কারণে কিছুটা চিন্তায় ছিলাম। এখন ভালো বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতের পাট ভালো হয়েছে।’
আরও পড়ুনঃ পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার সচেষ্ট: পাট মন্ত্রী
ফরিদপুর কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হযরত আলী জানান, আবহাওয়াগতভাবে ফরিদপুর অঞ্চল পাট আবাদের জন্যে উপযোগী, এ জেলার মাটির স্বাস্থ্য পাট চাষে শ্রেষ্ঠ, যে কারণে এর আঁশ গুনগত মানসম্পন্ন।
তিনি বলেন, এবারের বপন মৌসুমে প্রচণ্ড খড়া থাকায় চাষিদের দুই থেকে তিন বার সেচ দিতে হয়েছে, এতে চাষিদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।
হযরত আলী বলেন, জেলার চাষিরা এই মৌসুমে ১০ লাখ ৫২ হাজার বেল পাট উৎপাদন করবে আশা করছি।